নিজস্ব প্রতিবেদকঃ জামালপুর
ক’দিন হলো গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিলাম উদ্দেশ্য ছিল গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে গ্রামের মানুষ কেমন আছে তা দেখার জন্য। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সবার একই কথা এরপর কী হবে? তবে তারা অত্যন্ত আশাবাদী যে আওয়ামী লীগ আবার ঘুরে দাঁড়াবে। কোটি কোটি সমর্থক দলের নীতি নির্ধারকদের পরবর্তী পদক্ষেপ ও নির্দেশের জন্য অপেক্ষা করছে। আবার বিএনপির সমর্থক নেতাকর্মীরাও ক্ষমতার স্বাদ পাওয়ার জন্য অধীর আগ্রহী হয়ে আছে! তাদের মধ্য থেকে অনেকে আবার বলছেন ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে অনেকে আখের গুছিয়ে নিয়েছেন। তাদের নিজ দলের নেতাদের আচরণেও তারা বেশ হতাশ!
আমি খবর নিয়ে জানতে পারলাম স্থানীয় ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ের নেতারাও বাজার সিন্ডিকেট ইজারাঘাট, সিএনজি, অটোরিকশা ও বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত দখল করে নিয়েছেনা। এইসব জায়গা থেকে তারা মোটা অংকের টাকা আদায় করছে। স্থানীয় বিভিন্ন বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেমন উচ্চ বিদ্যালয়, মাদ্রাসা ও কলেজগুলোর প্রধান শিক্ষক ও কমিটির প্রভাবশালী সদস্যদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে!
তারা টাকা হাতিয়ে নিতে চাকুরিচ্যুত, মারধর, ঘরবাড়িতে আগুন দেয়া, সন্তানদের মেরে ফেলা ও অন্যান্য ক্ষতি করার হুমকি দিচ্ছেন। ফলে মানুষ বাধ্য হয়ে অর্থ দিয়ে টিকে আছেন। এসব ভুক্তভুগীরা কোথাও অভিযোগ করতে পারছেন না।
আমার এলাকার স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের আওয়ামী সমর্থক চেয়ারম্যানের অফিসে তালা মেরেছে। ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে জন্ম নিবন্ধন, সনদ সংশোধন, ভোটার আইডির কাজ ইত্যাদির জন্য অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। জনগণ একেবারেই নিরপায় হয়ে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে সেবা নিচ্ছে। ইউনিয়ন পর্যায়ে বিভিন্ন সেফটি নেট সার্ভিস যেমন বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, টিসিবি কার্ড, ফেয়ার প্রাইস, খাদ্য সহায়তার কার্ড ইত্যাদিসহ সকল তালিকা জব্দ করে তাদের নিজেদের জন্য ৪০% বরাদ্দ রেখে কাজ করার জন্য সকল চেযারম্যান ও মেম্বারকে জিম্মি করেছে। এতে সাধারণ মানুষ বেশ ক্ষুব্ধ হচ্ছেন !
গ্রাম ও ইউনিয়ন পর্যায়ের বিএনপি’র ছোটখাটো পাতিনেতাও আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছে! সাধারণ মানুষ বলাবলি করছে ,ক্ষমতা পাওয়ার আগেই বিএনপির লোকেদের যে অবস্থা তা দেখে মনে হচ্ছে সামনে ভীষণ দুর্ভোগ পোহাতে হবে। প্রসঙ্গত ,গরীব মানুষের জন্য শেখ হাসিনা সরকারের নেওয়া বিভিন্ন সেফটি নেট সার্ভিসগুলো হলো ভিজিডি, ভিজিএফ, কর্মসৃজন কর্মসূচি, কমমূল্যে টিসিবির খাদ্যপণ্য বিতরণ কর্মসূচি, ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিতরণ, বিধবা ও বয়ষ্ক ভাতা ইত্যাদি। এই সেবাগুলোতে এখন তাদের পছন্দ অনুযায়ী সামর্থবান ব্যক্তিদের নাম ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে। ফলে প্রকৃত গরিব মানুষ আর এসব সেবা পাচ্ছে না।
এছাড়া দরিদ্র ভূমিহীন মানুষের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বরাদ্দের ঘরটি থেকেও অনেক আওয়ামী লীগ সমর্থক ও গরীব পরিবারকে হুমকি দিয়ে বের করে দেওয়া হয়েছে। গ্রাম ও মফস্বলের কাঁচাবাজার, হাটের পণ্যের ইজারা, গরুর বাজার, খেয়া ঘাট ও ব্রীজের ইজারাও বিএনপি জামাতের লোকজন দখল করে নিয়েছে।
চাঁদাবাজি করছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও হিন্দু সম্প্রদায়ের বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, মিষ্টির দোকান, মণিহারী ও অন্যান্য ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে।
চাঁদাবাজি করে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে স্বনামধন্য ডাক্তারদের নিকট থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। ৫/৮/২৪ তারিখ রাতে ও এর পরের দিনগুলোতে অনেক ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ডাক্তারের কাছ থেকে মোটা অংকের চেকও নিয়েছে। ডাক্তারগণ এ ব্যাপারে কাউকে বলতে ও সেনাবাহিনীর কাছে অভিযোগ দিতে সাহস পাচ্ছেন না।
প্রথমদিকে পুলিশ না থাকায় গ্রামে গঞ্জে চুরি ডাকাতি বেড়ে গেছে। সংঘবদ্ধভাবে গরু চুরি, অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায় করা হচ্ছে এলাকায় এলাকায়। মানুষ কোনো অভিযোগ নিয়ে থানা বা সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে যাচ্ছে না। কারণ মানুষ আস্থা ও নিরাপত্তা পাচ্ছে না। রয়েছে মিথ্যা মামলা ও বিনা মামলায় গ্রেফতারের আতঙ্ক। জনজীবনের সর্বত্র কেবল অস্থিরতা বিরাজ করছে।
Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit. Ut elit tellus, luctus nec ullamcorper mattis, pulvinar dapibus leo.