অভিমন্যু ফয়েজী
আইজ একখান্ জিনিস লইয়া আলাপ করবাম। ঘটনা ক’দিন আগের। কওয়ার ইচ্ছা আছিল্ ম্যালা; কিন্তুক এর মইদ্যে অইন্য কাহিনী আমার এক দোস্ত আম্লীগের সুমায় সচিব, নাকি কী জানি আছিলেন; কাউয়া ভাইয়ের বিশেষ পিরিয় ব্যক্তি ছিলেন; তাইনের লগে লগে ঘুরতেন; আর আমগো লাহান দুই চাইরজন ঘুরতাম সচিব স্যারের পিছে পিছে; পুরাপুরি চামচ আছলামনা; আদ্দেক চামচ, আদ্দেক দোস্ত; তো তাইন মোগোরে পাবলিক পেলেসে ব্যাকটির সামনে কইতাইন, “শেখ হাসিনা দ্যাশটারে বেহেশত বানাই হেলছেন; আর তুমরা বাঙ্গালীরা তাইনের পিছে আজেবাজে কতা কও।” গোপনে এই বুজুর্গ আদমী আমরার মতন তাইনের দুই চাইরজন নাদান গোপাল ভাঁড় দোস্ত কাম চামচেরে খালি কইতেন, “দ্যাশটা সিন্ডিক্যাটে খাই হ্যালছে; বুইঝছনি? জিনিস পত্রের এমুন দাম যে, বাজারে কোন কিছুত্ আত দেওন যায়না।” মনে পড়ে, একদিন তাইনের বাসাত্ মোরগ পোলাও পরিবেশন হইছিল্। মুরগীর লগে বেশ সোন্দর চেহারার ডিমও পেলেটের এক পাশে দেয়া। তাইন মুরগীর রান চাবাইতে চাবাইতে কইসলান, “মুরগী আর ডিম মাইনষের খাওনের জো নাই, বুঝলানি?” তাইনের নাদান বন্ধুগো মইদ্যে আছিল্ এক বিচ্ছু। হ্যাতে কিছু না বুইঝাই দোস্তের হাতের মুরগীর রানের দিকে চাইয়া কইলে, “কতা অবইশ্য সইত্য; মুরগী আর ডিম এহন চোর ছ্যাঁচড় ছাড়া কেউ খাইতে হারতোনা।” এর পরের ঘটনা আসলে ইতিহাস হইছিলো। হেই দোস্তরে কী কারনে য্যান আমাগো ওই সচিব দোস্ত আর তাইনের আসরে কুনোদিন ডাকেন নাই।
তো যাই হোক। আইজকার কতা এইসব খুচরা বিষয় লইয়াই কম্যু অনে। আম্লীগ নাই; আম্লীগের সিন্ডিকেটও নাই। তয় বাজারের হাল হকিকত্ এমন ক্যা? সব জাগা’ত কীএক্টা অবস্থা। এট্টু খোঁজ খবর নিলাম লোকজনের কাছত্। বঙ্গদ্যাশে হাসিনা সবতেরে বয়াইয়া দিয়া গ্যাছে বইলাই হুনতে আছি আগষ্টের পাঁচ তারিখ তোন্। কাইল খপর নিয়া জানলাম, হাসিনার আমলে এক আলি ডিমের দাম নাহি উডানামা করতো বত্রিশ থাইক্কা চল্লিশের মইধ্যে; মাইনে এক খান্ ডিমের দাম আছিল্ আট থাইক্যা দশ ট্যাহা; হেই সময় পাবলিকের গরম কথা হুনতাম যে, ডিমের দাম এত্ত বেশী ক্যা?; পাবলিক কইতো, ডিম নাহি আয়না ঘরত্ যায় থেরাপির লাইগ্যা। তয় এহন অবস্থাটা কী? এহন দেহি একখান্ ডিমের দাম নাহি পনরো ট্যাহা; তাইলে চাইরখানের দাম খাড়াইলো ষাইট ট্যাহা। মনু, এহন ডিম কোন্ আয়না ঘরে যায় কও দেহি।
মোগো আরেক হনু অবতার অর্থ উজির খুবওই পন্ডিত আদমী; তাইনের চুল সাদা অইলেও এহনও খাড়া থাহে দ্যাশের কতা ভাবতে ভাবতে। বঙ্গদ্যাশের ব্যাঙ্ক’র গভর্নর আছিলেন এক আমলে। অর্থের উজিরে আজম সাব ঢাকাই ছবির নায়কেগো লাহান তাইনের খাড়া সাদা চুল উড়াইয়া রাইগ্যা মাইগ্যা কইলে, “ডিম কি মুই মেশিন দিয়া বানাইবে? মুই কি মেশিন পয়দা করবে ডিম বানানের উদ্যান?” এক ফাজিল বিচ্ছু সাংবাদিক নাকি পিছন থাইক্যা কইলে, “হুজুর, আমিতো ভাবছিলাম আপনে নিজেই মেশিন; আপনেরা সব্বাই মেশিন; যাউক গা, আপনেরার কতা হুইন্যাতো মোগো মনে হইছিল্ আপনেরাই “সংস্কার” নামের মেশিন; অহন অইন্য কতা হুনি; পয়দা করতে অইলে করবেন; এত কিছু পয়দা কইরালছেন ব্যাক জা’গাত্; নুইচ্চার লগে যোগ দিছেন; আপনের ভাবেতো মনে হইছিল্ , জিনিস হত্রের দাম নাইম্যা যাইবো আপনের মেশিনে ঘড়ঘড় কইরা; মেশিনের নাকি খালি চালু হওন বাকী ছ্যাল্; এহন অইন্য কতা কইলে চলবে, কাক্কু? ডিমতো কাক্কু সহজ জিনিস না; হ্যাশে এই ডিম আপনের কোন্ কামে লাগে কিডা জানে? আগের আমলের ডিমের কারবারি বহুত পাবলিকের না জানি কী পরিমান ডিম শইল্লের মইধ্যে নেয়া লাগতেছে তা এহন আপনে আর আপনের নুইচ্চা আব্বা জানবেন।”
পেরায়ই অর্থের হনু মশাই ওয়াজের মতন বয়ান করেন, হাসিনার সরকার দ্যাশের অর্থনীতিত্ ধ্বস নামাইয়া দেলে। দ্যাশের সব বাজার নাকি হ্যাগো সিন্ডিকেট কনটোরোল কইরতো; হেইয়ার লাইগ্যাই বাজারের এই হাল। এক বিচ্ছু কইলে, “কাহা, ঘডনা কী? এহনতো আম্লীগের সিন্ডিকেট নাই; তাইলে জিনিসের দাম এত্ত বেশী ক্যা?” মুই কইলে, হুনলাম আম্লীগ সিন্ডিক্যাট নাহি এহন “ধানের শীষ মোকামের” নাম নিছে। পনরো বছরের ক্ষুধা এত সকালে মিটতোনা রে বাপ! আহা রে, হ্যারা পনরো বছর নৌকার মাঝিমাল্লাগো সব খাইতে দিছে; খালি মাইরটা হ্যারা খাইছে; অহন হ্যাগোরে এট্টু খাইতে দে বাপ; তরা মাইরটাই খা অহন। আবার চক্রাকারে তোগো দিনও আইবো। নুইচ্চা কাক্কু শুরুর দিনই ছ’শো কোটি খাইছে। হেইদিন দ্যাখলাম আরেক কেইস বাতিলের লাইগ্যা আপীলের পারমিশান পাইছে। পারমিশান আর কী? হ্যায় নিজেইতো পারমিশান! খাউক, কাক্কু আরেকটু খাউক; হারা জীবন খাইছে; হাসু বু এট্টু বাগড়া দেছেল্। হ্যার ব্যবস্থাতো হইছে; এহন আবার খাওন শুরু অইলে; তয় বাকীগোরেও এট্টু আধটু খাইতে দিতে আছে; হাসনাইততারে দেহি ভিজা শুকনা দুইডাই খাইতে দ্যাছে; বেনপি নাকি মোকাম আর রাস্তার টেরাক মেরাক সবই খায়; কাওরান বাজারত্ চাঁন্দাও হ্যারাই খায়; সব জা’গার খাওয়া খাওয়ি সবই নাকি হ্যাগো আতে; খাওয়াখাওয়ি যদি এট্টু আধটু না-ই করলো তাইলে ক্ষ্যামতায় যাওনের সুখ কীরে বাপ? বেনপি’র বাইয়ারেওতো ভাগ দেতে অয়; লন্ডনত তাইন কত্ত কষ্ট করিয়া থাকুইন; তাই মোরা চাই, তাইন এট্টু বৈদেশে আরামে আয়াশে থাকুইন; এইডার খরচ মরচ আছেনা। তাইনতো সৎ মানুষ; ওগ্গা শিলিংও নিজে রুজি করেননা; তাই বইলাইতো মোরা চুপ থাকতে নারি; এইয়া দেয়ার লাইগ্যাই বেনপি এ্যাইহানে হেইহানে খানাপিনা করে। সবই বাইয়ার মঙ্গলের লাইগ্যা।”
চাইলের খপরও হুনলাম। মোর তিন নম্বর বিবি কইলে, হ্যারা যেই চাইল খায়, হাসিনার আমলে নাহি হেইয়ার কেজি উডানামা করতো সত্তইর থেইকা আটাইত্তর এর মইদ্যে; আর অহন নাহি সবচাইয়া খারপ চাইলডা কমের পক্ষে পঁচাশি থাইয়া অষ্টাশি ট্যাহা। খপরের কাগজে দ্যাখলাম, কী দিন আইলে যে, কাঁচা মরিচের দাম নাহি মুরগীর দামের চাইয়াও বেশী। ঘোর কলিকাল! মোর বিচ্ছু ভাতিজা জামাইল্যা কইলে, “কাগা, আমরা অহন তুন খালি মুরগী খামু; কাঁচা মরিচ খাইতাম না।” কিন্তুক মুরগীইবা খাইবে ক্যাডা? মুরগী রানতে যেই’রাম মশলাপাতি লাগে হেইয়ার দামওতো আকাশ ছোঁয়া; এইদিকে পাবলিকের আয় ইনকাম নাই; মুরগীইবা ক্যানবে ক্যামতে? খাইবে কোয়ান দিয়া?
এইসব দিগে নোবেল কাক্কুগো খপর নাই; হেগো কাম অইলে ক্যামতে শ্যাখেরে নামান যায় হেইয়া আর ক্যামতে আম্লীগ ধ্বংস করন যায় হেই ব্যবস্থা করন; আর শ্যাখের বেডি য্যান দ্যাশে আইতে না হারে হেই নিয়াই হ্যারা ব্যস্ত। গরীব মাইনসে কী খাইলে আর কী না খাইলে হেইয়া নিয়া হেগো দামী মেধাবী মাতার মগজের বেরেইন খরচ করনের কাম কী?
তয় কতা অইলে, তুমি বুক পকেটে ছুরি লইয়া ঘোরলে কোন্ দিন যে এই জিনিস তোর বুকেই বেঁধে হেইয়া কইবে ক্যাডা, বাপ? কতাখান মোর না; মোগো বরিশাইল্যা বিচ্ছু খইল্যার।