অভিমন্যু ফয়েজী
বাঙ্গালি বড়ই বিচ্ছু। একাত্তরে একবার এইরাম বিচ্ছুগিরির যন্ত্রণায় তাবড় তাবড় মচুয়া পাকিস্তানি জেনরেলরা কাইত অইয়া গেছিলেন। আমাগো গোআ সাব তাইনগোরে কাঁঠালের আমসত্ত্ব আর ঢাকার কদমতেলের মিশ্রন সাপ্লাই দিতেন তাঁগোর মোচে শান্ দেওনের কামে। তবে সেই গল্প আরেকদিন হইবো। আইজ একটু রিসেট কাহিনী নিয়া দুইখান কথা কইতে চাই।
নিয়াজী কন, আর টিক্কা কন, এমনকি মায় ইয়াহিয়া সাবের মতন খাঁটি পাইন্জাবি মচুয়াই কন্, এঁদের নাম হুনলে আমাগো বঙ্গদেশের বহু সৈয়দ বংশীয় আদমী “পাক সার জমিন সা’দ বাদ” কইয়া মনে মনে এহনো তাইনগো পাক পবিত্র ঠ্যাং এর উপরে ঝাঁপাইয়া পড়েন; আহারে তাইনগোর গায়ের রঙ আছিল্ পরনের সাদা পাইন্জাবীর চাইতাও সাদা; এক্কেরে দেবদূত; কিন্তু ওই বিচ্ছু কিসিমের দুই চাইরজন অইন্য কথাও কয়। একাইত্তরে নাকি ওই কিসিমের দৈত্যাকৃতির বেবাক মচুয়ারা ঢাকার ধোলাই খালে ধোলাই অইয়া গেছিলেন; পরনের পাইন্জাবীর মত তাগোর গায়ের সাদা রং ধোলাইয়ের পরে নাকি আমরার বাথরুমের ত্যানার রং হইয়া গেছিল্; কথা সইত্য কিনা জানিনা অবশ্যি; অশিক্ষিত্ মানুষ; বুঝিওনা ভালা। তবে মনে লয়, তাইনগো দোষ আছিল্ না কিছুই। তাইনরাও “লড়কে লেঙ্গে পাকিস্তানের” জোসে গরমের গপ্ মাঘে করবার চাইছিলেন; মানে বাঙ্গালীর সব কিছু রিসেট করবার চাইছিলেন। বাঙ্গালীও এমন বিচছু যে, ওই পাইন্জাবী মচুয়ারা রিসেট বাটনে চাপ দেয়ার আগেই ক্যামতে জানি সব হারাইননা ফাইল ফিরাইয়া আনার টোকনিক শিককা ফালাইছিলো। ফলাফল আপনেরা ব্যাকতেই কম বেশী জানেন। পাইন্জাবী মচুয়া জেনরেলরা রিসেট বোতামে চাপ দিয়া রিসেটতো করতে পারেই নাই, বরং পুরানা সব ফাইল বাঙ্গালী ক্যামনে য্যান রিকভার কইরা ফালাইছিলো হেই আমলে, আর তাইনগো ফাইলগুলাই নষ্ট কইরা দিছিলো! কারন বাঙ্গালী জাইন্না ফালাইছিলো ক্যামতে রিসেটের পরেও আলাদা কইরা ফাইল ফিরাইয়া আনন যায়। মচুয়া পাইন্জাবীরা এই জিনিস টেরই পায় নাই হেই সময়। বাঙ্গালী বিচ্ছুগুলান বড়ই বদখত্ জাত!
হেইদিন ভাতিজা সম্পর্কের এক বিচ্ছু আমারে কইলো, “কাক্কু, নোবেল কাক্কুরেতো একটু রিসেট বিষয়ে টেরনিং দেওন লাগে।” আমি মুখ্যুসুখ্যু মানুষ; এই বিচ্ছুর কথা বুঝন আমার কাম না; তবুও কইলাম, “শানে নজুলটা কও ভাইস্তা।” হ্যাতে চোখ নাড়াইয়া, চেহারা কাঁপাইয়া, ঠোঁট উল্টাইয়া, ভুরু কুঁচকাইয়া আমারে কইলো, “তুমি কোন কামের না কাক্কু। শোন নাই আমরার নোবেল কাক্কু কইছে তাইন নাকি আগের সব কিছু মুইচ্ছা এই জুলাইয়ের সময় থিকা বাঙ্গালীর নতুন ইতিহাস শুরু করবেন? এইটাই নাকি স্বাধীনতা; পোলাপাইন আর নিস্পাপ শিশুগোরে নিয়া তাইন নাকি আমরার ইতিহাস আর সংস্কৃতির উপরে রিসেট চাবিত টিপ দিয়া দিছেন। এখন থাইক্কা সব ইতিহাস আর আমরার সংস্কৃতি নতুন কইরা শুরু হইবো। এইটা নাকি নয়া স্বাধীনতার যুগ”।
আমি একটুক ভ্যাবলা মাইরা গ্যালাম। কইলাম, “দূর ব্যাডা, এইডা অয় নাকি?” সে কি আর থামে? আমারেই উল্টা দাবড়ানি দিয়া কইলো, “দেখ নাই তাইন ভোয়ারে কী কইছে?” আমি কইলাম, কী কইছে ভাইস্তা? কইলো, “ভোয়ার আনিস স্যার তাঁরে বঙ্গবন্ধু আর আমরার স্বাধীনতা নিয়া একটা প্রশ্ন করছিলেন। তাইতেই আমরার নোবেল কাক্কুর কালা বদন ক্ষেইপা পুরাই লাল; আনিস স্যারেরে উল্টা তাইন প্রশ্ন করা হিকাইয়া দিলেন। স্যারে ভুইল্লা গেছিলেন যে, কাক্কু কিন্তুক নোবেল! বাংলাদেশের একখান্ মাত্র পিস্! যা তা ব্যপার! তার উপরে তাইন নাকি ঘরে ঘরে শান্তি আনছুইন! কী বিরাট কাম! ক’জনে পারে? এই পুরস্কার নিজে ধইন্য হইছে কাক্কুরে দিয়া। তোই যাই হউক, কাক্কু কইলেন, আনিস স্যারের প্রশ্ন করন উচিত জুলাই’র “স্বাধীনতা” নিয়া; এইটা নয়া জিনিস; আনিস স্যার কী সব প্রশ্ন করবার লাগছেন ষাইট বছরের পুরান মাল লইয়া। ছাত্ররা নাকি রিসেট বাটনে চাপ দিয়া পুরান জিনিস মুইচ্ছা নতুন মাল আমদানী শুরু করছে।”
আমারতো পুরাই টাসকি লাইগ্গা গেলো। মনে মনে কইলাম, হালায় কয় কী! মুখে কইলাম, “এর মানে কী, ভাইস্তা? আমরার স্বাধীনতা, শ্যাখের ব্যাডা সব কই যাইবো?” ভাইস্তা দাঁত মুখ খিঁচাইয়া কইলো, “সব নাকি বাদ। নতুন দ্যাশ, নয়া ইতিহাস, নয়া স্বাধীনতা”। আমার আবারো টাসকি লাগলো। না বুইঝাই কইলাম, “তাইলে নয়া স্বাধীন দ্যাশের তাইন কি জাতির পিতা হইবেন?” ভাইস্তা এক হাল হাসি দিয়া কইলো, “এতক্ষনে তোমার মাথাডা খুলছে, কাক্কু। হেতার মনের মইধ্যে হেই জিনিসই আছে। তয় তাইনও হইতে পারেন, তাইনের আদর্শিক পরদাদা জিন্নাহ সাবও হইতে পারেন; আর আমরার জাতীয় সঙ্গীত পাল্টাইয়া “মেরা জান রিসেট করনা চাহিয়ে” টাইপের করতে পারেন; কওন যায়না কিছুই; আলামত হেইরমই মনে লয়। তয় জিনিস এত সোজা না। এইরাম বহুত রিসেট বাটনে চাপ দিছে তাইনের আদর্শিক বাপ, চাচা, দাদা, পরদাদারা; বায়ান্নতে, একাত্তইরে, পাঁচাত্তইরেও আমগোরে নয়া স্বাধীনতা দিছিলেন তাইনরা; রিসেট বাটনে বারবার হ্যারা চাপ দিছে, আর বাঙ্গালী বিচ্ছুরা প্রত্যেকবার সব ফাইল আবার উদ্ধার করছে; এনাগো ধারনা নাই যে, বাঙ্গালী রিসেটের পরও ফাইল বাঁচানের তরিকা জানে। ভাষার ফাইল, যুদ্ধের ফাইল, একাত্তইরের স্বাধীনতার ফাইল, তারার সংস্কৃতির ফাইল সবই বাঙ্গালী হার্ড ড্রাইভে এ্যামতে রাখছে যে নোবেল কাক্কু আর তাইনের দ্যাশ আর বিদ্যাশের দোসররা হাজার বার রিসেট বাটনে চাপ দিয়াও এই কিসিমের ফাইল মুছতে পারতোনা।”
আমি ফ্যাল ফ্যাল কইরা ভাইস্তার দিকে চাইয়া রইলাম। জিগাইলাম, নোবেল কাক্কু এদ্দিন চুপেচাপে আছিল্?
ভাইস্তা দম নিয়া কইলো, নোবেল কাক্কু যে আমরার সব মুছতে চায় এই জিনিস তাইন পন্চান্ন বছর চাইপা রাখছেন। এহন বাইরাইছে; কিন্তুক রিসেটের পরে যে রিইনষ্টল বইলা একখান্ ঘটনা আছে এইটা নোবেল কাক্কু জানেননা; তাঁর গুরু ইয়াহিয়া, টিক্কা, নিয়াজী, নিক্সন, কিসিন্জার, গোলাম আজম এনরাও জানতেননা। কাজেই দেখা যাক, কদ্দুর কাক্কু যাইতে পারেন”।
আমার আর কথা আগাইলোনা; তয় বুঝলাম বাঙ্গালী বিচ্ছুরা যদ্দিন আছে, নোবেল কাক্কুর লাহান পাবলিকের রিসেটে চাপ তাইনগোরেই ভুলাইয়া দিবো; বিচ্ছুগো কাছে পাল্টা রিসেট বাটন আছে; গত সাতাত্তইর বছরে বহুত রিসেট বাটন বাঙ্গালী দ্যাখছে; তয় যারাই এই বাটনে চাপ দিয়া বাঙ্গালীরে তাগো ইতিহাস ভুলাইতে চাইছে, হ্যারাই আস্তাকুঁড়ে গ্যাছে। এইটাই নিয়ম।
Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit. Ut elit tellus, luctus nec ullamcorper mattis, pulvinar dapibus leo.