ঢাকার সাভার–আশুলিয়া ও গাজীপুর শিল্পাঞ্চলে শ্রম পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। গতকাল বুধবার অধিকাংশ কারখানায় শ্রমিকেরা শান্তিপূর্ণভাবে কাজ করেছেন।
অবশ্য চলমান শ্রম অসন্তোষের জেরে গতকাল সাভার–আশুলিয়ায় ২৫টি কারখানার উৎপাদন বন্ধ ছিল। এর মধ্যে অধিকাংশ তৈরি পোশাক কারখানা। গাজীপুরে বকেয়া বেতনসহ বিভিন্ন দাবিতে কর্মবিরতি পালন করেন চারটি পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা।
আশুলিয়ার শিল্প পুলিশের তথ্যানুযায়ী, সাভার-আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে গতকাল সকালে বেশির ভাগ শিল্পকারখানা খোলা ছিল। বন্ধ ছিল ২৫টি শিল্পকারখানা। এর মধ্যে সাধারণ ছুটি ছিল ৫টি কারখানায়। আর বাংলাদেশ শ্রম আইনের ১৩(১) ধারায় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ছিল ২০টি কারখানা। বন্ধ কারখানার মধ্যে ওষুধ, চামড়াজাত পণ্য প্রস্তুতসহ কিছু প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
আশুলিয়ার পরিস্থিতি উন্নতি হয়েছে। কারখানার মধ্যে যেখানে
যে সমস্যা ছিল, সেগুলো সমাধান করা হয়েছে। বন্ধ থাকা
কারখানা কাল (আজ) কিছু খুলবে। শনিবার থেকে
শতভাগ কারখানা চালু হবে।
খন্দকার রফিকুল ইসলাম, সভাপতি, বিজিএমইএ
অবশ্য তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ জানিয়েছে, সাভারের আশুলিয়ায় ২৭২টি পোশাক কারখানার মধ্যে ১৬টি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ছিল। এর মধ্যে রয়েছে গ্লোরিয়াস সান ফ্যাশন, স্যান অ্যাপারেলস, কমফিট কম্পোজিট, রেডিয়েন্স জিনস ও রেডিয়েন্স ফ্যাশনস, মেহনাজ স্টাইল ক্রাফট, স্ক্যানডেক্স বিডি, আরকে নিটওয়্যার, টেক ম্যাক্স, শিন শিন অ্যাপারেলস, পার্ল গার্মেন্টস, জেনারেশন নেক্সট, ইউফোরিয়া, সুসুকা নিট, ভিনটেজ গার্মেন্টস ও আঞ্জুমান ডিজাইনারস। এ ছাড়া ১১টি কারখানায় সবেতন ছুটি কিংবা শ্রমিকেরা কারখানায় উপস্থিত হয়ে কাজ করেননি।
জানা যায়, আশুলিয়ার পার্ল গার্মেন্টসের সাময়িক বরখাস্ত হওয়া শ্রমিকেরা গতকাল নবীনগর থেকে চন্দ্রাগামী সড়কের সামনে জড়ো হয়েছিলেন। পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা তাঁদের বুঝিয়ে সেখানে থেকে সরিয়ে দেন।
আশুলিয়ার শিল্পাঞ্চল পুলিশ-১–এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম প্রথম আলোকে বলেন, কয়েকটি কারখানায় শ্রমিক উপস্থিত হলেও দাবি পূরণ না হওয়ায় কাজ করেননি। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
গাজীপুরে চার কারখানার উৎপাদন ব্যাহত
গাজীপুরের টঙ্গীতে বকেয়া বেতনসহ বিভিন্ন দাবিতে কর্মবিরতি পালন করেন চারটি পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা। গতকাল সকাল থেকে নিজ নিজ কারখানার সামনে এ কর্মসূচি পালন করেন তাঁরা। এতে কারখানাগুলোর উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়।
কারখানাগুলো হলো টঙ্গীর মেঘনা সড়ক এলাকার এমট্রানেট গ্রুপের গার্মেন্টস এক্সপোর্ট ভিলেজ ও ব্রাভো অ্যাপারেলস; খাঁ পাড়া এলাকার সিজন ড্রেসেস লিমিটেড ও বিসিকের টসিনিট কারখানা। এসব কারখানায় সাত–আট হাজার শ্রমিক কাজ করেন।
জানা গেছে, কারখানার বিভিন্ন কর্মকর্তার পদত্যাগ, ঈদ বোনাস, ছুটি বাড়ানোসহ মোট ১৩ দফা দাবিতে গত মঙ্গলবার কারখানার ভেতর দিনভর কর্মবিরতি পালন করেন গার্মেন্টস এক্সপোর্ট ভিলেজ ও ব্রাভো অ্যাপারেলসের শ্রমিকেরা। দাবি পূরণ না হওয়ায় গতকাল সকাল থেকে আবার কর্মবিরতি শুরু করেন তাঁরা। একপর্যায়ে কারখানার সামনে বিক্ষোভে নামেন কিছু শ্রমিক। অন্যদিকে একাধিক দাবিতে কর্মবিরতি পালন করেন টসিনিট কারখানার শ্রমিকেরাও।
সিজন ড্রেসেস লিমিটেডের শ্রমিকদের গত জুলাই ও আগস্ট মাসের বেতন বকেয়া। বকেয়া মজুরির দাবিতে মঙ্গলবার সকালে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করলে জুলাই মাসের অর্ধেক বেতন পরিশোধ করে মালিকপক্ষ। এর মধ্যে বাকি অর্ধেক বেতনের দাবিতে গতকাল সকালে কারখানা উপস্থিত হলেও কাজ বন্ধ রাখেন শ্রমিকেরা।
জানতে চাইলে গাজীপুর শিল্প পুলিশের টঙ্গী জোনের সহাকারী পুলিশ সুপার মো. মোশারফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা চার কারখানার শ্রমিকদের নানাভাবে বুঝিয়ে শান্ত রাখার চেষ্টা করছি।’
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর গত মাসে তৈরি পোশাকের পাশাপাশি ওষুধ খাতের শ্রমিকেরা বিভিন্ন দাবি আদায়ে বিক্ষোভে নামেন। ওষুধ খাতের উদ্যোক্তারা দ্রুত নিজেদের কারখানার শ্রমিকদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করে কিছু দাবি মেনে নেন। তবে পোশাকশিল্পের মালিকেরা এমন উদ্যোগ নিতে কিছুটা বিলম্ব করলে অসন্তোষ অনেক কারখানায় ছড়িয়ে পড়ে। পরে শ্রমিকদের চারটি দাবি মেনে নিলে পরিস্থিতি উন্নতি হতে থাকে। এর মধ্যে মঙ্গলবার শ্রমিকদের দুই পক্ষের সংঘর্ষে একজন নারী শ্রমিক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ২০-৩০ শ্রমিক।
জানতে চাইলে বিজিএমইএর সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, আশুলিয়ার পরিস্থিতি উন্নতি হয়েছে। কারখানার মধ্যে যেখানে যে সমস্যা ছিল, সেগুলো সমাধান করা হয়েছে। বন্ধ থাকা কারখানা কাল (আজ) কিছু খুলবে। শনিবার থেকে শতভাগ কারখানা চালু হবে।