অভিমন্যু ফয়েজী
আমার বিচ্ছু ভাইস্তা গোপাইল্যা আমারে আইজ কইলো, কাক্কু, বাংলাদেশত্ সবচাইয়া নাদান প্রানী কারা কও দেহি? আমি এট্টু অবাক অইলে। চাইয়া চিন্তা কইলে, গরু। হ্যায় হাইস্যা উঠলো হা হা কইরা। কইলে, “ক্যা? গরু ক্যা?” আমি কইলাম, “কারন, গরুরে দিয়া যা ইচ্ছা তাই করন যায়; চাষ বাস করা যায়; হ্যারার দুধ খাওন যায়; ফাইনালি হ্যারার দিন শ্যাষ হইলে বাজারে বেইচা খাওন দাওনও করন যায়; বিনিময়ে হ্যারারে এট্টু ঘাস আর ভূষি খাওয়াইলেই বড় বড় চোখ কইরা খুশী অইয়া মালিকের দিকে চায়”। গোপাইল্যার হাইস আর থামেনা। আমি গরম অইয়া কইলে, তুই মোর লগে তামশা কর ক্যা? হ্যায় হাইস থামাইয়া কইলে, “কাহা, আসল কতা এট্টু ফরে কই। তুমি আমারে কহ দেহি, এই ময়মনসিং, বরিশাল, ঢাহা সব একাকার কইরা তুমি কতা কহ ক্যা?”
আমিও হাইস দিয়া কইলাম, “আরে সব জা’গাত কম বেশ আছলাম ছোড বেলায়; ভালা কইরা এক জা’গার ভাষা শেখনের আগেই আরেক জা’গাত চইলা যাইতে হইছে। ইয়ের লাইগ্যাই মোর কতার মইদ্যে তিন চাইর ডিস্টিক এক লগে খেলে। বুঝলানি কাহিনী? এইবার আসল কতা কও দেহি। কিয়ের লাইগ্যা বাংলাদেশের নাদান পেরানী নিয়া পড়লা? গরুর চাইয়া নাদান ক্যাডা?” গোপাইল্যা ক্যামন য্যান একখান দুঃকু দুঃকু হাসি দিয়া কইলে, “কাহা, তুমি নিজেও আসলে নাদান। বুঝো না বাংলাদ্যাশের হালচাল। হেই দ্যাশে সবচাইয়া নাদান পেরানী অইলে ইন্দুরা; হ্যারা ঠিক মানুষ না; পেরানী বটে, কিন্তুক মানুষ কওন যায়না। তয় গরুর কাচাকাচি অইতে হারে।”
আমারতো এইরাম কতা হুইন্না আক্কল গুড়ুম। হালায় কয় কী? জিগাইলাম, “ক্যান রে ব্যাডা? এত পেরানী থাকতে ইন্দুরা গরু ক্যান?” গোপাইল্যা কইলে, “গরুরে লইয়া য্যামন যা খুশী করন যায়, বাংলাদ্যাশে ইন্দুগোরে লইয়াও হ্যামন করা যায়”। আমি চক্ষু কপালে তুইলা জিগাইলাম, য্যামন? গোপাইল্যা কইলে, য্যামন দর, এই দ্যাশে আম্লীগ থাইক্যা যত্ বার দ্যাশ স্বাধীন হইছে তত্ বারই হ্যারা ইন্দুগো আম্লীগ আর ইন্ডিয়ার দালাল কইয়া দিছুইন মাইর; এইবারও দ্যাশ নোবেল কাক্কু আর হুজুরেগো সামনে লইয়া যহন স্বাধীন অইলে, তহন ইন্দুগো মন্দির, ব্যবসা, দোকান পাট সব বাঙ্গা শুরু অইলে; শোনা কথা, শত্ খানেক ঢ্যাঁডা আর মালায়ুন ট্যাঁটার গুতা খাইয়া সারা জন্মের লাইগ্যা বিশ্রামে গ্যালে; সবই স্বৈরাচার করছে; আর এর বেশীর ভাগই নাকি গুজব। এমনকি কাক্কুর পিরিয় পত্রিকা “পহেলা সুবেহসাদিক” যহন কইলে ১১০০ ঘটনা ঘটছে ইন্দুগো বিরুদ্ধে তহনও জানা গ্যাল, এইগুলা নাকি আম্নীগের কাম। কিন্তুক আম্লীগতো মাঠত্ নাই; তাইলে ক্যামতে কী? হ্যারা করলে হ্যাগোরে দরেন। কিন্তুক না, হেইয়া হুজুররা করবেননা; তাইনরা আম্লীগরে মাফ কইরা দিছেন। আর নোবেল কাক্কুও কইলে, “যেই ইন্দুগো থেরাপি দেয়া অইছে, হ্যারা ব্যাকটি আম্লীগ করতো; হিয়ের লাইগ্যাই এইগুলা ঘটছে।” ভালা কতা; তা যেই সকল মোছলমানরা আম্লীগ করছে হেগো মসজিদ ভাঙ্গেনা ক্যারা? এই কতা নুইচ্চার কানে গেলে আমারেই উল্টা থেরাপি দিবো।
যাক, ইয়ার পরেও সোজাসুজি মাইর খাইয়ে ইন্দুরা নুচ কাক্কু আর হুজুরেগো কইছুইন, তোরা মোগো মার ক্যান? মোরাতো ইন্দু- মোছলমান বাই-বাই।” বছ্, তাইনরা ঢাকেশ্বরী মন্দিরত গুরতে যাইয়া ইন্দুগো বুকে জডাইয়া কইছুইন, “আয় বাই, বুকে আয়”; হেরপর তাইনরা ব্যাকটি মিল্লা গান শুরু কইরলেন, “মোরা একই বোঁডায় দুইআন কুসুম, ইন্দু মোছলমান; ইন্দু মোগো চক্ষের মনি, মুসলিম মোগো পেরান”; গানখান সোন্দর; তয় পেরান কিন্তুক কাহা মোছলমানরাই; চোখ গ্যালেও ক্ষতি ত্যমন নাই, পেরানখানতো থাকবো; কিন্তুক পেরান গেলে কিডা থাকপে কাহা? এইয়া বোঝতে বেশী অসুবিদা অয়না।
ইয়ার পরেই তাইনরা কইছুইন, “আমরার এই বঙ্গদ্যাশে হকল আকামের কাজী আম্লীগ। হেগো সুমায় ইন্দুগো যেই হারে থেরাপি দিছে, মোরা হেইয়া অইতে দিমুনা নোবেলের আমলে। মোরা সব মন্দির পেহারা দিমো।”ইন্দুরা খুশীতে বাগ বাগ অইয়া ফেইসবুকে পোস্ট দেয়া দরলে এই বইলা, বাংলাদ্যাশ স্বাধীন হইছুইন; ইন্দুরাও স্বাধীন আইজ থেইকা; শফিক হুজুর আগের হকল নিয়ামনীতি বাইঙ্গা ঢাকেশ্বরীত গেছুইন; এইয়া কি কম অইলে?” এইহানেই শ্যাষ না; দুই একজন ইন্দু কইলে, মোরাও মসজিদ পেহারা দিতাম চাই; লগে লগে হুজুরেগো চোখের লাল চাঁদ তারা দেইখ্যা হ্যারা কইলে, মানে আপনাগো মসজিদ আপনেরাই পেহারা দিবেন, কিন্তু যদি পান-সুপারি সাপ্লাই লাগে মোগোরে কইয়েন।
হুজুররা কইলান, মাদ্রাসার ছাত্ররা মন্দির পেহারা দিবে। কিন্তুক ঝামেলা বাঁধলো যহন কয়েক জা’গাত উল্টাপাল্টা ঘটনা ঘটলে। তহন গুজুরেরা কইলে, এগলা স্বৈরাচারের লোকেরা করছে। ইন্দুরা হেইয়াতেও খুশী হইলে; কইলে, কতা সইত্য; স্বৈরাচার ছাড়া কোম্বে এ্যমোন কাম করতে হারে! হুজুরেরাই বালা। মোরা দ্যাশে সংস্কার আনতে আছি; হুজুরেগো আর মোরার নোবেল কাক্কুরে অহন সাপোর্ট দেয়া লাগপে। ইন্দু মোছলমান বাই বাই বইলা কতা।
ইয়ার পরেই আরেক ঘটনা ঘটলে। ইন্দুগো পুজার মন্ডপে পরম পবিত্র ইসলামী গান পরিবেশন করলে মোরার চট্টগ্রামের এক সঙ্গীত গোষ্ঠী। এইয়াও মানা যায়, কারন মোরা যে গরুর লাহান পেরানী। মোগো পুজা কমিটির এক লোকে নাকি পয়সা খাইয়া হেগোরে ডাকছেল্; দোষতো হেই লোকের; যারা গানটা গাইলে তাগো কী দোষ? জামাতী হজুরেরা কইলে, এই গটনার লগে হ্যারার কুনো যোগাযুগ নাই। কাজেই দোষ আসলে আমরারই; লগে আরো দুই চাইরজন নাদান পাবলিক নাকি জড়িত। এইয়াতো ইচ্ছা কইরা কেউ করে নাই; ভুলক্রমে ঘইটা গ্যাছে। শিল্পী বাইয়েরা ভুল কইরা পুজামন্ডপে সবাইরে ইসলামের দাওয়াত দিছেন। আসলে তাইনরা এইয়া করতে চান নাই; অইয়া গেছে আর কী। ম্যান ইজ মরট্যাল; মানুষ মাত্রেই ভুল।
নুচ কাক্কু কইছুইন, এইবারকার দূর্গাপূজায় নাকি বিশেষ আনন্দের উৎসব হইতে আছে। শুইন্যা গোপাইল্যা নাকি হ্যার মায়েরে এট্টু জিগাইলো, মা, পূজা ক্যামুন অইতে আছে? মায় কইলে, ভালাই। গোপাল জিগাইলো, তুমি পূজাত্ যাও নাই? মায় কইলে, কেউই যাইতাছেনা; মন্ডপ পেরায় খালি। গোপাইল্যা কইলে, তাইলে যে কইলে পুজা ভালা অইতে আছে? মায় কইলে, অয়, টিভিত্ ত দেহি খবর বার্তা ভালা। গোপাল পাল্টা জিগাইলে, তয় তুমি পূজা দেখতে যাও নাই ক্যারে। মায় কইলে, “ডর করে বাপ।” কতা শ্যাষ। এই হইলে নুইচ্চার রাজত্ত্বে দুর্গা পূজার বিশেষ আনন্দ। কীএক্টা অবস্থা!
বঙ্গদ্যাশের ইন্দুরা গরুর লাহান পেরানী, মানুষ না, কাহা।