বিতর্কিত ব্যবসায়ী সাইফুল আলমের গৃহকর্মী মর্জিনা আকতারের ব্যাংক হিসাবে অন্তত ১ কোটি টাকা জমা থাকার তথ্য পেয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এখন জানা যাচ্ছে, সেই গৃহকর্মীর স্বামী সাদ্দাম হোসেনকে ইসলামী ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ মুখ্য কর্মকর্তা (এসপিও) পদে সরাসরি নিয়োগ দিয়েছে তাঁর মালিকানাধীন এস আলম গ্রুপ। গত মে মাসে এই নিয়োগ দেওয়ার সময় ব্যাংকের নিয়োগ সম্পর্কিত নিয়মের ব্যত্যয় করা হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
নিয়োগের পর সাদ্দাম হোসেনকে প্রথমে পদায়ন করা হয় ব্যাংকটির চট্টগ্রামের দক্ষিণ জোনে। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তাঁকে চট্টগ্রামের চকবাজার শাখায় পদায়ন করা হয়। ব্যাংকে তিনি পরিচিত এস আলমের লোক (এস আলম’স ম্যান) হিসেবে। পদায়নের পর তিনি নিয়মিত অফিস না করলেও এখন তিনি অফিসে যাচ্ছেন। ইসলামী ব্যাংক সূত্রে এই তথ্য পাওয়া গেছে।
সাইফুল আলমের চট্টগ্রামের বাসায় এক দশক ধরে কাজ করেছেন গৃহকর্মী মর্জিনা আকতার। এনবিআরের যে তদন্ত দল এস আলম পরিবারের সদস্যদের কর ফাঁকির অভিযোগ খতিয়ে দেখছে, তারা ইসলামী ব্যাংকে মর্জিনা আকতারের নামে থাকা ২২টি হিসাবে এক কোটি টাকার বেশি স্থায়ী আমানতের সন্ধান পেয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গভর্নর আহসান এইচ মনসুর দায়িত্ব নেওয়ার পর ইসলামী ব্যাংকের বোর্ড ভেঙে দেওয়া হয়, যেখানে চেয়ারম্যান ছিলেন এস আলমের ছেলে আহসানুল হক।
আওয়ামী লীগ সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে ২০১৭ সালে ইসলামী ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ হাতে নেওয়ার পর প্রায় ১০ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দেয় এস আলম গ্রুপ। তাঁদের অনেকের শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ নিয়ে প্রশ্ন তুলে চাকরিচ্যুত করার দাবি করেছেন ব্যাংকের পুরোনো কর্মীরা। কেবল ইসলামী ব্যাংক থেকেই নামে-বেনামে প্রায় ৮৮ হাজার কোটি টাকা একাই এস আলম গ্রুপ নিয়েছে বলে জানিয়েছেন নতুন চেয়ারম্যান ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ।
নতুন কর্মী নেওয়ার ধারাবাহিকতায় গত ১৩ মে কোনো পরীক্ষা ছাড়াই সরাসরি ইসলামী ব্যাংকে এসপিও হিসেবে নিয়োগ পান সাদ্দাম হোসেন। তাঁর মূল বেতন ধরা হয় ৫৫ হাজার টাকা। তবে সব মিলিয়ে প্রতি মাসে এক লাখ টাকার বেশি বেতন-ভাতা পান তিনি।
এনবিআরের যে তদন্ত দল এস আলম পরিবারের সদস্যদের কর ফাঁকির অভিযোগ খতিয়ে দেখছে, তারা ইসলামী ব্যাংকে মর্জিনা আকতারের নামে থাকা ২২টি হিসাবে এক কোটি টাকার বেশি স্থায়ী আমানতের সন্ধান পেয়েছে।
ইসলামী ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সাদ্দাম হোসেনকে যখন নিয়োগ দেওয়া হয়, তখন মানবসম্পদ বিভাগের প্রধান ছিলেন উপব্যবস্থাপনা পরিচালক আকিজ উদ্দিন। তিনি সাইফুল আলমের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা। সাদ্দাম হোসেনের নিয়োগের সময় জীবনবৃত্তান্ত ছাড়া আর কোনো নথিপত্র ব্যাংকে জমা পড়েনি। এরপরও তাঁকে নিয়োগ দেন আকিজ উদ্দিন। এ ছাড়া ইসলামী ব্যাংকে এসপিও পদে সরাসরি নিয়োগের কোনো নিয়ম নেই। কিন্তু এমন একজনকে এই পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, যাঁর ব্যাংকিংয়ে কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতাও ছিল না।
ইসলামী ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, সাধারণত স্নাতকোত্তর শিক্ষাগত যোগ্যতাসম্পন্ন তরুণেরা কর্মকর্তা পদে যোগ দেন, এরপর তিন বছর পর তাঁরা জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা পদে পদোন্নতি পান। এরপর মুখ্য কর্মকর্তা ও জ্যেষ্ঠ মুখ্য কর্মকর্তা (এসপিও) পদে পদোন্নতি মেলে। এসপিও হতে কারও কারও ১০ বছর পর্যন্ত সময় লাগে। অথচ সাদ্দাম হোসেন সরাসরি এসপিও পদে নিয়োগ পেয়েছেন।
ব্যাংকে জমা দেওয়া নথিপত্র অনুযায়ী, সাদ্দাম হোসেনের বাড়ি ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার মুন্সিরহাটের দক্ষিণ বাগবেড়ে। তাঁর বয়স ৩১ বছর ৮ মাস। ২০০৭ সালে এসএসসি ও ২০১০ সালে এইচএসসি সম্পন্ন করেন তিনি। ২০১৪ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উদ্ভিদবিদ্যায় স্নাতক সম্পন্ন করেন। একই বিষয়ে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন ২০১৯ সালে।
ইসলামী ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, সাধারণত স্নাতকোত্তর শিক্ষাগত যোগ্যতাসম্পন্ন তরুণেরা কর্মকর্তা পদে যোগ দেন, এরপর তিন বছর পর তাঁরা জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা পদে পদোন্নতি পান। এরপর মুখ্য কর্মকর্তা ও জ্যেষ্ঠ মুখ্য কর্মকর্তা (এসপিও) পদে পদোন্নতি মেলে। এসপিও হতে কারও কারও ১০ বছর পর্যন্ত সময় লাগে। অথচ সাদ্দাম হোসেন সরাসরি এসপিও পদে নিয়োগ পেয়েছেন।